

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশে এখন জনসমাগম নিষিদ্ধ। নামাজও মসজিদে না গিয়ে ঘরে আদায় করার পরামর্শ দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ নিয়ম মানা হচ্ছে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে, এমনকি বাংলাদেশেও। অথচ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা যোবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজায় সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা মানা হয়নি। লকডাউন সত্ত্বেও হাজারো মানুষ জানাজায় অংশ নেন। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসামাঠে। ছবি: ঈশ্বরদীনিউজ টুয়েন্টিফোর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় করোনাভাইরাসের কারণে দেওয়া লকডাউন উপেক্ষা করেই ইসলামি আলোচক আল্লামা মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজায় অংশ নিয়েছেন কয়েক লাখ মুসুল্লি।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই তার জানাজায় অংশ নেন লাখো মানুষ। এসময় পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ছিল অনেকটাই নীরব। বেশ কয়েকজন পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও তারা ছিলেন দর্শকের ভূমিকায়। এদিকে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই আশঙ্কা করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
জানা যায়, জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকে পিক আপ ভ্যানে করে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা ও আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়তলা মাদ্রাসায় আসতে থাকে মুসুল্লিরা। এসময় জানাজায় অংশ নেওয়া অতিরিক্ত জনসমাগম ওই মাদ্রাসা মাঠ ছাড়িয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দু’পাশ পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। একদিকে বিশ্বরোড মোড় হয়ে সরাইলের মোড় পর্যন্ত, অপরদিকে আশুগঞ্জের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকে জনসমাগমের ঢল। এছাড়া ওই এলাকার আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদেও মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ বিষয়ে জেলা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেন, “বর্তমান করোনাভাইরাসের কারণে দুইজনের অধিক লোক সমাগম নিষিদ্ধ। সেখানে হাজারও বা লাখো মানুষের ঢল জনস্বার্থ পরিপন্থী। ঘটনাটি বিব্রতকর ও বেদনাদায়ক। এছাড়া তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ দিয়ে এমন পরিস্থিতি সামাল দেয়া মোটেও সম্ভব ছিল না।”
ইসলামি আলোচক আল্লামা মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজায় অংশ নেওয়া কয়েক লাখ মুসুল্লি। ছবি: ঈশ্বরদী নিউজ টুয়েন্টিফোর
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাৎ হোসেন টিটু সাংবাদিকদের কাছে লাখো মানুষ সমাগমের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও ঢাকা থেকে প্রচুর মানুষ আসে।আমরা চিন্তাও করতে পারিনি যে এত লোকসমাগম হবে। এত মানুষ আসতে শুরু করার পর আমাদের আর কিছু করার ছিলো না। ” তবে বলার পর উপস্থিত লোকজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জানাজায় অংশ নেন বলেও দাবি করেন ওসি ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ বলেন, “যেখানে করোনাভাইরাসের ঝুঁকির কারণে একসঙ্গে মসজিদে নামাজ আদায় না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেখানে কীভাবে এতো লোক সমাগম হল তা বোধগম্য নয়।”
জনসমাগমের ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এএস মুছার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে আমার কোনও বক্তব্য নেই। জেলার উপরি মহল থেকে বক্তব্য নেন।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, সকাল থেকে বেড়তলা মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছিলাম। আমাদের পক্ষ থেকে উনাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্যে। এনিয়ে এলাকায় মাইকিংও করা হয়। কিন্তু আমরা শেষ চেষ্টা করেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারিনি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মার্কাসপাড়ায় নিজ বাসভবনে মারা যান যুবায়ের আহমেদ আনসারী। যুবায়ের আহমেদ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমির এবং বেড়তলা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন। এছাড়া তিনি একাধিক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।