

ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ১১ এপ্রিল মারা যান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এক ব্যক্তি। ভয়ে কেউ এগিয়ে এলেন না। এমনকি জানাজা পড়ানোর মতো কেউ এলেন না। একদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে, আরেক দিকে কালবৈশাখীর পূর্বাভাস। এমন অবস্থায় ঝিনাইদহ সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজেই তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে নিয়ে জানাজার ব্যবস্থা করলেন এবং ইমামতি করলেন।
ইউএনও মো. বদরুদ্দোজা বলেন, জীবনে প্রথমবারের মতো জানাজায় ইমামতি করলেন। উপায় ছিল না। আশপাশের এলাকা প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছিল।
শুধু এ ঘটনাই নয়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসক, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি সারা দেশের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সারা দেশের মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, ত্রাণ বিতরণ, হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন কাজ করছেন। এসব কাজ করতে গিয়ে এখন নিজেরাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা।সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন কাজ করছেন ঝুঁকিতে কাজ করছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, গত রোববার পর্যন্ত প্রশাসন ক্যাডারের ছয়জন কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও গাজীপুরের কর্মরত কর্মকর্তাও রয়েছেন। তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল একটি জেলার জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া কিছুদিন আগে দুদকের এক কর্মকর্তা (প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মাঠ প্রশাসনের সবার প্রতি বার্তা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন নিজের সুরক্ষা বজায় রেখে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন।
গত ৮ মার্চ থেকে দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘোষণা দেওয়া হয়। এখন প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত এই রোগে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। আর মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৪৮ জন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে দেশের প্রায় অর্ধেক জেলায় লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাজের পরিধি আরও বেড়েছে। জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে সরাসরি এই কাজগুলো করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনাররা।
বর্তমানে সারা দেশে পৌনে পাঁচশ ইউএনও রয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি উপজেলায় সহকারী কমিশনারও (ভূমি) আছেন। বর্তমানে মাঠ প্রশাসনে তাঁদের কাজের পরিধি বেশি। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ইউএনও মো. নাজমুল আলম বলেন, এই মুহূর্তে তাঁরা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, যাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার দরকার, সেটি হচ্ছে কি না, তা–ও দেখভাল করছেন। আবার তাঁদের খাবার সরবরাহ হচ্ছে কি না, সেটিও দেখছেন। এ ছাড়া ত্রাণ বিতরণের পরিধিও বাড়ছে। এসব কাজে ঝুঁকি থাকলেও পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই। ঝুঁকি মেনে নিয়ে যতটুকু সম্ভব সাবধানে থেকে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছেন।
মাঠ প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাঠপর্যায়ে কাজগুলো করতে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। কারণ, মফস্বলে হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের বেশ উপস্থিতি থাকছে। আবার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কর্মহীন মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ত্রাণের চাহিদা বাড়ছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ–প্রবণ এলাকা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ (সংক্রমণ ছড়ানোর কেন্দ্রস্থল) এবং গাজীপুর থেকে অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ নিজ নিজ এলাকায় গেছেন। তাঁদের অনেকেই তথ্য গোপন করে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অন্যদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। এসব মানুষকেও সামলাতে হচ্ছে প্রশাসনকে। ফলে সব মিলিয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।