

ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা
রমজান মাসজুড়ে রোজাদারদের বিনামূল্যে ইফতার খাইয়ে চলেছে ঈশ্বরদী বাজারের বৈকালী সুইটসমিট। হোটেলের মালিক বলছেন, মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপালাভের আশায় এভাবে রোজাদারদের খাওয়ানোর মাধ্যমে তিনি আত্মতৃপ্তিও পাচ্ছেন।
পাকশী ইউনিয়নের এক শিক্ষার্থী সাজিদ ইসলাম ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আলোচনা চলছে ঈশ্বরদীজুড়ে। প্রশংসায় ভাসছেন মালিক মো. কপন ফকির।
শিক্ষার্থী সাজিদ ইসলামে বলেন, গত সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় ঈশ্বরদী থেকে নিজের বাড়িতে আসার সময় ফ্রি ইফতার খাওয়ানোর বিষয়টি বুঝতে পারি। নিজের কাছেই অজান্তে ভালো লেগে যায়। সেখান থেকেই মঙ্গলবার (২৮ মে) দিনগত রাতে ফেসবুক পাতায় স্ট্যাটাসটি দেই।
বুধবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় বৈকালী সুইটস মিটে ইফতারের পূর্ব-মুহূর্তে প্রায় ৩০-৩৫ জনকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। যার মধ্যে রয়েছে ছিন্নমূল, বাজারের পথচারী ও এলাকার দরিদ্র মানুষ। পাশাপাশি ভালো লাগা থেকে বাজারের অনেকে ব্যবসায়ী ইফতার সংগ্রহ করছেন। ইফতার সেবায় নিয়োজিত হোটেলের আপ্যায়নকর্মীরা বেশ আন্তরিকতায় সবার হাতে তুলে দিচ্ছেন ইফতার। পানি, খেজুর, পেয়াজু, বেগুনি, চপ, মুড়ি, জিলাপিসহ বেশ কয়েকটি আইটেম রয়েছে ইফতারে।


বিনা পয়সার ইফতার নেবার সময় সিএনজি চালক গিয়াস বলে, ‘প্রায় প্রতিদিনই রোজা থাকি। বাজারে থাকলে ইনাদের ফ্রি ইফতার নিই। আমার মতো আরো অনেক সিএনজি চালকই প্রতিদিন ইফতার নেন ইনাদের কাছ থেকে।’
ইফতার নেওয়ার সময় সেলিম নামে একজন বৃদ্ধার সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘রোজা রেখে আসলে সে রকম কিছু কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। জানি তাদের দোকানে আসলে ইফতার পাবো। তাই প্রতিদিন বিকালে এখানে আসি।’
বাজারের বৈকালী সুইটসমিটে সমিরন সেনা নামে এক নারী জানান, ‘এখান থেকে ইফতার পাবার পর সেটা বাড়িতে নিয়ে পরিবারের সাথে ভাগ করে খাই। কারণ বাহিরে ইফতারের দাম অনেক বেশি। তাই প্রতিদিন বাড়ি থেকে হেঁটে আসেন হোটেলে। সমিরনের অনেক প্রতিবেশীই এখান থেকে ইফতার গ্রহণ করে বলে তিনি জানান।
ঈশ্বরদী বাজারের এক পথচারী কামরুজ্জামান শুভ বলেন, আমি ইফতার খাওয়া শেষ করে বিল দেওয়ার জন্য হোটেলের ম্যানেজারের কাছে যাই। তিনি আমাকে বিনয়ের সঙ্গে বললেন টাকা দেওয়া লাগবে না। বিষয়টি বুঝতে পারলাম না। তাই আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন টাকা দেওয়া লাগবে না। তিনি আমাকে বললেন, ‘বাবা বছরে ১১ মাস ব্যবসা করি, এক মাস আল্লাহতায়ালার অশেষ কৃপা লাভের আশায় রোজাদার ব্যক্তিদের খেদমত করি। আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম এবং বিষয়টি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করলাম। জানতে পারলাম তিনি হোটেলের ম্যানেজার নন, তিনিই হোটেলের মালিক মো. কপন ফকির।
যোগাযোগ করলে বৈকালী সুইটসমিট মালিক কপন ফকির বলেন, বছরের ১১ মাস ব্যবসা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় খুবই ভালো আছি। নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য রমজানে বিনামূল্যে ইফতার খাওয়ানোর আয়োজন করেছি। শুরুর দিকে ৮০-১০০ জনকে বিনামূল্যে ইফতার খাওয়ালেও এখন এর সংখ্যা দেড়শ’র বেশি গিয়ে ছাড়ায়। এতোটুকু সেবা করতে পারাটা সৌভাগ্যের বলেই মনে করি।