

খননযন্ত্র বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমন রোধে প্রশাসন ব্যস্ত থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকার নদীর তীরে খননযন্ত্র বসিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এতে ওই নদীর আশপাশে বসবাস করা মানুষ নদীভাঙনের আতঙ্কে আছেন। বালু উত্তোলন চলতে থাকলে বর্ষার আগে বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ভেঙ্গে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আনেকে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এ বালু উত্তোলনের সঙ্গে পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক বিশ্বাসসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা জড়িত। চক্রতি ১০-১২ দিন ধরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় পাঁচ-ছয়টি খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করেছেন।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীতে সারি সারি খননযন্ত্র বসানো। ওই জায়গা থেকে বালু তুলে বিক্রি করছেন কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী। পাইপের মাধ্যমে আশপাশের এলাকাসহ ৩-৮ কিলোমিটার দূরের এলাকায় যাচ্ছে এসব বালু। এ অবস্থা চলতে থাকলে অল্প দিনেই এ এলাকাটি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া ঝুঁকিতে রয়েছে। নদী থেকে অবাধে বালু তোলায় হুমকির মুখে পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও আবাদি জমিসহ নদী তীরের কয়েক শ পরিবার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই নদী থেকে অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন। করোনায় মানুষ যখন অনেকটা দিশেহারা, ঠিক এ সময়ে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন তারা। প্রশাসনও রয়েছে নীরব ভূমিকায়।
ইউনিয়নের হঠাৎ পাড়া এলাকাযর নদী পাড়ের বাসিন্দা তাহের বাবু বলেন, ‘এসবের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা কথা বলে কোনো লাভ হয় না। আর যার নেতৃত্বে বালু উত্তোলন হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নাই।’
‘এভাবে নদীতে মেশিন বসিয়ে রাত-দিন বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, অথচ তা দেখার কেউ নেই। এবার বর্ষায় নদীগর্ভে ভেঙে যাবে আমাদের বসতভিটা ও আবাদি জমি’, যোগ করেন তিনি।
আমিনুর রহমান নামে এক ড্রেজার মালিক জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার সহযোগিতায় প্রশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজ করে তারা বালুর ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ড্রেজার মালিকরা ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে টাকা দেই। তাই যত ঝুঁকি আসে তা সামলানোর দায়িত্ব ওই নেতার।’
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতু, লক্ষীকুন্ডার নবীনগর ঘাট ও সাঁড়া ইউনিয়ন এলাকায় সরকারি জায়গা দখল করে বালু ব্যবসা বন্ধ ও পদ্মা নদীর তীর থেকে জব্দ করা বালু নিলামে বিক্রি করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাতে ৪৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় বালু বিক্রি করা হয়।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব রায়হান বলেন, পাকশী পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চলছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনামুল হক বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার কোন প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার ফোন করা হয়। কিন্তু ফোন ধরেননি তিনি।