

শফিকুল ইসলাম শামিম। ফাইল ছবি
দেশের প্রয়োজনে যুদ্ধ করার ইতিহাস অনেক জাতির আছে যুগে যুগে। আর এই ইতিহাসের বড় একটি অধ্যায় বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম। ’৭১-এর যুদ্ধে ছাত্র থেকে শিক্ষক, দিনমজুর থেকে কৃষক যারা নেমেছিলেন, নির্দিষ্ট ট্রেনিং শেষে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা এখন স্বাধীন। এই স্বাধীন বাংলাদেশে এবং সারাবিশ্বে বর্তমান সময়ে আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। সারা দেশ আতঙ্কিত এই ভাইরাস নিয়ে। হাট-ঘাট-মাঠ সবই শূন্য। সবাই নিজের নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে থাকাটাই নিশ্চিত করছেন। কোথাও কেউ নেই। মন্দির, মসজিদ, গির্জা, প্যাগোডা- সব খাঁ খাঁ করছে।
সব যখন প্রায় বন্ধ, খোলা শুধু হাসপাতাল। মানুষ এখন হাসপাতালে। আর এসব হাসপাতালে অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তার-নার্সসহ চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। দেশে দেশে করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে একমাত্র ভরসার আর মানুষের চোখে যারা সুপারহিরো তারা হচ্ছেন ডাক্তার। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক ডাক্তার রোগীর জীবন বাঁচাতে গিয়ে করোনাভাইরাসের আক্রমণে প্রাণ দিয়েছেন। শতভাগ নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেয়ার পরেও তারা আক্রান্ত হয়েছেন।
এমন চিকিৎসকের মধ্যে একজন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম শামিম নির্ভয়ে দিয়েছেন করোনা সন্দেহে হাসপাতালে আসা ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা। এছাড়াও নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনামূলক পোস্ট দেন। কেউ যেন এই রোগে ভীতস্থ হয়ে না পড়েন এবং চিকিৎসাসহ যেকোনো পরামর্শ গ্রহণের জন্য নিজের মুঠোফোনের নম্বরটিও পোস্ট করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্যান্য চিকিৎসকদের মধ্যে করোনা চিকিৎসক হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন ডাক্তার শামিম।
যখন এমনই হচ্ছিল তখন আচরণ বিধিবাম সেই চিকিৎসকই শ্বাসকষ্ট নিয়ে জীবন সংকটে পড়েছেন। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু অবস্থা গুরুতর হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। শনিবার (০৬ জুন) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তাঁর পরিবার থেকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও থানা সূত্রে জানা যায়, ডাক্তার শফিকুল ইসলাম শামিম খুবই জনপ্রিয় মানুষ। তিনি রাশিয়া থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন, ভাষা জানেন। এই জন্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ান নাগরিক ও সেখানকার শ্রমিকদের করোনা নমুনা সংগ্রহের বেশির ভাগ কাজই করতেন ডাক্তার শামিম। এই কারণে তার মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। শুক্রবার (০৫ জুন) তার মা করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও তার নমুনা পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। সেই সঙ্গে ডাক্তার শামিমের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এই জন্য তাকে বাড়িতে রেখেই অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু তার অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় বিশেষ ব্যবস্থায় শনিবার দুপুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও পাড়ায়-মহল্লায়, হাট-বাজারে কিংবা চায়ের দোকানে মানুষের মুখে মুখে আলোচনার কেন্দ্রে তার নাম শোনা যাচ্ছে ডাক্তার শামিম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন—এমন গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। তবে তিনি এ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হননি কথাগুলো বলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এফ এ আসমা খান।
তিনি আরও বলেন, ডাক্তার শামিমসহ তাঁর মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী করোনা ল্যাবে পাঠানো হয়। শনিবার (০৬) সন্ধ্যায় সেখানকার পাঠানো প্রতিবেদনে সবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।