

দিনাজ হত্যা মামলায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান ২ আসামি, স্ত্রীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঈশ্বরদী থানা। ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার। ছবি: সংগৃহীত
ঈশ্বরদীতে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে দিনাজ উদ্দিন প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তির হত্যা মামলার রহস্য ৩৬ ঘণ্টার মধ্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। সেই সঙ্গে সোমবার (২০ এপ্রিল) দিবাগত রাতে মুলাডুলি ইউনিয়নে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই জন এবং নিহতের বাড়ি থেকে স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে মুঠোফোন সেট ও ট্রাক।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের সরাইকান্দি পশ্চিমপাড়া গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে কামরুল হাসান ওরফে কামির ফকির (৪২), মৃত জামাল উদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে মফিজুল ইসলাম মিন্টু (৩৫) এবং নিহতের স্ত্রী হোসনেআরা বেগম (৪২)।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরবিন্দ সরকার জানান, দিনাজের স্ত্রী হোসনেআরা বেগমের সঙ্গে কামরুল হাসানের ছোট বেলা থেকেই সম্পর্ক ছিলো। এমন অবস্থায় দিনাজের সাথে হোসনেআরার বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর দিনাজ বিদেশে চলে গেলে কামরুল হাসানের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর দিনাজ দেশে ফেরেন। এ নিয়ে জানাজানি হলে একাধিকবার পারিবারিকভাবে দেনদরবার বসে। হোসনেআরা বেগম প্রতিবারই ক্ষমা চেয়ে প্রায় তিন বছর ধরে সংসার করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি ওই পথ থেকে একেবারে আর ফিরতে পারেননি। সে কারণে প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটতো।
এরই জের ধরে গত ১৮ এপ্রিল রাতে মুলাডুলির আরআরপি ফিড মিলের ট্রাক চালক কামির ফকির ফোন করে দিনাজকে সরইকান্দিতে ডেকে এনে হেলপারসহ একসাথে গাঁজা সেবন করেন। একপর্যায়ে দিনাজ বেসামাল হয়ে পড়লে তাকে ট্রাকের কেবিনের মধ্যে নিয়ে ২জন মিলে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশ নিয়ে ট্রাক চালিয়ে গোয়ালবাথান গ্রামের হায়দার মাস্টারের পারিবারিক কবরস্থানের পাশে জঙ্গলে ফেলে রাখে। পরে তারা আর আরপিফিড মিলের মালামাল নিয়ে নরসিংদী চলে যায়।
সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নরসিংদী থেকে অন্য মালামাল নিয়ে ফেরার পথে মুলাডুলি চেকপোস্টে ট্রাকসহ তারা গ্রেপ্তার হয়। পরে থানায় দেয়া স্বীকোরক্তির ভিত্তিতে রাতেই হোসনেয়ারাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দীন ফারুকী বলেন, নিহত দিনাজও দুষ্টু প্রকৃতির ও মাদকাসক্ত ছিলেন। বিয়ের আসর থেকে হোসনেয়ারাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে তিনি বিয়ে করেন।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফিরোজ কবির বলেন, এ হত্যার ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার কামির ফকির ও মফিজুল ইসলাম মিন্টু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে জবানবন্দির মধ্য দিয়ে দিনাজ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার সকাল ৬টায় মুলাডুলি ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামের হায়দার মাষ্টারের পারিবারিক কবরস্থানের পাশে জঙ্গলের মধ্য থেকে পুলিশ দিনাজ প্রামাণিকের মরদেহ উদ্ধার করে।