

বারবার সচেতনতার বার্তা ছড়ালেও কেউ সচেতন হচ্ছেন না। বেলা ১১টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও সকাল থেকেই দেখা যায় ভিড়ের এই চিত্র। কেউই মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। পৌর মার্কেট, ঈশ্বরদী, ১১ এপ্রিল। ছবি: হাসান মাহমুদ
করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষে-মানুষে ‘সামাজিক দূরত্ব’ (তিন ফুট দূরত্ব) বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও হাট-বাজারে সেই ‘সামাজিক দূরত্ব’ অনেকেই মানছেন না। হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রায়ই একে অন্যের গা-ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার রক্ষা করছে না। এর ফলে করোনা-সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকানে আগের মতই মানুষের আড্ডা চোখে পড়ছে। প্রশাসনের নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না তারা।
সদরের পৌর সুপার মার্কেটের কাঁচা বাজারে দেখা গেছে, সবজি কিনতে ক্রেতারা ভিড় করছেন। তাঁদের মাঝখানে ১০ ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা নেই। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেননি। হাতে গ্লাভসও নেই। দোকানি ও ক্রেতার মাঝখানেও তেমন দূরত্ব রক্ষা করা হয়নি। এছাড়া, ক্রেতা-বিক্রেতাকে যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলতে দেখা গেছে।
কয়েকজন ক্রেতার সাথে আলাপে জানা গেছে, তাঁরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে জানেন। কিন্তু কেনাকাটা করতে এসে পরিস্থিতির কারণে ঠিকমতো সেই দূরত্ব রক্ষা করতে পারেন না বলে দাবি করেছেন। আর বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেও তারা কেউ শোনেন না।
জানা গেছে, ওষুধের দোকান, মুদি দোকান ও সবজির দোকান ব্যতিত সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। উপজেলার অনেক বাজারে এই নির্দেশনা মানছে না। ঈশ্বরদী বাজারের বহু পাইকারী-খুচরা বিক্রেতাই দোকানের এক ঝাঁপ বন্ধ খোলা রেখে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন। মনে হয় দোকান খোলা রাখার প্রতিযোগীতায় মেতেছে তাঁরা।
ঈশ্বরদী বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, মানুষের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। আগের মতই বাজারে চলাফেরা করছে। বিশেষ করে ঢাকা শহর থেকে যারা গ্রামে আসছে তারা বাড়িতে না থেকে বাজারে আড্ডা জমাচ্ছে। অথচ তারা হোম কোরারেন্টিনে থাকা অনেকটা বাধ্যতামূলক।
নিয়ম না মানা ও সচেতনতার অভাব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসমা খান বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধের যে কয়েকটি ধাপ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ধাপ হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে ৬০ ভাগেরও বেশি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। করোনা একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষে সর্বনিম্ন ফুট ও সর্বোচ্চ ৬ ফুট পর্যন্ত দূরত্বে ছড়াতে পারে। তাই মানুষে-মানুষে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে যেভাবে ভিড়ের কারণে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘিত হয়, তাতে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।’
এই বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দীন ফারুকী জানান, আমরা বিভিন্ন বাজারে গিয়ে ওষুধ, মুদি ও সবজি দোকান ছাড়া বাকি সব দোকান বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দিয়েছি। এরপর মানুষের সচেতনতার সৃষ্টি লক্ষে এলাকায় গিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। তারপরও কোন কোন বাজারে ও গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকানগুলো বন্ধ করতে অভিযান শুরু করবো।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব রায়হান জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলার জেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত ভ্রামমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। করোনা সংক্রামক থেকে বাঁচতে মানুষকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।