শীত দুপুরের সেই মিঠে রোদ, ওই তো সব ভুলিয়ে দেওয়া বন্ধুর হাসি, তরুণ বেলার সেই পাকশীতে আবারও জমজমাট আড্ডা।
ব্যস্ত শহর জীবনের ফাঁকে পুরনো সহপাঠীদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে প্রতি বছরের মতো এবারও শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ’ এর ১৯৭৩ সালের এসএসসি ব্যাচের আয়োজনে পুনর্মিলনী-২০১৯ অনুষ্ঠানে পাকশী হাসেম আলী মিলনায়তনে জড়ো হয়েছিলেন শতাধিক সাবেক শিক্ষার্থীরা।
চারপাশ ঘেরা সবুজ গাছপালা ঘিরে ছাত্রজীবনের সেই আড্ডায় ফিরতে পেরে পুরনোদের চোখ-মুখে ঝিলিক দিয়ে গেল অতীতকে ছুঁয়ে দেখার উচ্ছ্বাস।
আর সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বে থাকা পূর্বসূরিদের কাছে পেয়ে নতুনদের বিকেল কাটল যেন স্বপ্নের ঘোরে।
দুই ধাপের অনুষ্ঠান সূচির প্রথম অধিবেশনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রয়াত প্রাক্তন শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা তাদের স্কুলজীবনে ফিরে যায় ও এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তারা এ মিলন মেলাকে আরও বেগবান ও প্রসারিত করতে উপদেশমূলক বক্তব্য দেন। এরপর মধ্যাহ্নভোজ, পরে র্যাফেল ড্র আর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
স্ত্রীকে নিয়ে পুনর্মিলনীতে এসেছিলেন ৭৩ ব্যাচের এ কে এম আজাদ। তাঁর সহধর্মিণী ফ্লোরা নাসরিন অনুভূতি ব্যাক্ত করে জানান, ‘দুই ছেলে প্রকৌশলী। তাঁরা স্বপরিবারে ঢাকাতে থাকেন। যান্ত্রিক কোলাহল ফেলে এক বছর পর একটি দিন দেখা হয় ভালো লাগে। তাই আমি সবার জন্য খিচুড়ি আর শীতের পিঠা বানিয়ে এনেছিলাম।’
১৯৭৩ ব্যাচের শেখ সফিউল ইসলাম তার অনূভুতি ব্যক্ত করে বলেন, বাবা রেলওয়েতে সরকারী চাকুরী করতেন। সেই সুবাদে পাকশী বড় হয়েছেন। স্বাধীনতার পর ঈশ্বরদীতে চলে যায় । এখন পরিবার নিয়ে রাজশাহীতে বসবাস করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘খুবই ভালো লাগে এখানে এসে। অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, স্মৃতি খুঁজি। কতোবার এসেছি… তারপরও বার বার আসার অপেক্ষায় থাকি। বছরের শুরুতে সবার একসাথে আসার সুযোগ হয়; তাই মিস করি না।’
এসএসসি প্রাক্তন ৭৩ ব্যাচের খালেকুজ্জামান টোকন বলেন, ‘অসাধারণ অনুভূতি। পুরনো অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমি প্রতি বছরই আসতে চাই। ঘুরে ফিরে এখানেই আসতে হবে আমাদের; প্রিয় মুখগুলো ফিরে পেতে চাই,’ বলেন তিনি।
বেলা গড়ালেও টেবিলের আড্ডা যেন শেষ হতে চায় না। মুনসুর রহমান, খালেকুজ্জামান টোকন, এসএম জাফর ঈমাম, দেওয়ান এস এম শামসুজ্জামান, মোঃ গোলাম কিবরিয়া, আঃ সালাম, আইযুব আলীসহ কয়েক জন আবার মেতে উঠেন নানা খুনসুটিতে। তারা সমস্বরেই বলেন, এই জমায়েতের অপেক্ষায় থাকি আমরা। সবাই একসঙ্গে হব, স্মৃতি আওড়াব, সুখে-দুখে পাশে থাকব, খোঁজ-খবর নেব; আনন্দ-আড্ডা দেব। নতুন-পুরনো অনেকের সঙ্গে দেখা হবে- এই তো আমাদের মিলনমেলা।
অনুষ্ঠানের আহবায়ক শফিকুল ইসলাম পাশা, তাঁর অনূভুতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘অসাধারণ অনুভূতি। পুরনো অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমি প্রতি বছরই আসতে চাই। ঘুরে ফিরে এখানেই আসতে হবে আমাদের; প্রিয় মুখগুলো ফিরে পেতে চাই।’
অনুষ্ঠানের ইতি টেনে যুগ্ম আহবায়ক নজরুল ইসলাম ভাদু বলেন,’আমাদের ভাষায় কোনো ‘গুডবাই’ নাই। আমরা বলি, আসি আবার দেখা হবে।’