ঈশ্বরদীর পৌর এলাকার আবুল হোসেন সরদার চেয়েছিলেন ক্ষতিকর স্টেরয়েডমুক্ত সুস্থ গরু কিনতে। শহরের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ‘অরনকোলা পশু হাট’ থেকে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) এমনই একটি গরু কিনতে পেরেছেন বলে তিনি নিশ্চিত। তাঁর এমন নিশ্চিত হওয়ার কারণ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসক দলের সদস্যরা হাটেই পরীক্ষা করে তাঁকে জানিয়েছেন, গরুটি নিরাপদ। ফলে দাম যা-ই হোক, সুস্থ ও নিরাপদ গরু কেনার আনন্দ নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন।
উপজেলার কোরবানির হাটগুলোতে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসক দলের উপস্থিতির কারণে আবুল হোসেন সরদারের মতো অনেক ক্রেতাই আস্থা নিয়ে গরু কিনছেন। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসক দল উপজেলার প্রতিটি হাটেই উপস্থিত থাকছে। দলটি দৈবচয়ন পদ্ধতিতে গরুগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখছে। গরুগুলোকে ক্ষতিকর স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে কি না বা সেগুলো অসুস্থ কি না, তা পরীক্ষা করছে। কখনো কখনো ক্রেতারা দলের সদস্যদের ডেকে নিয়ে নির্ধারিত গরুটি পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছেন।
গরু কেনার পর আবুল হোসেন সরদার বলেন, ‘স্টেরয়েড খাওয়ানো গরু নিয়ে ভয়ে ছিলাম। তাই হাটে গিয়ে গরুর দাম চূড়ান্ত করে মেডিকেল টিমের সদস্যদের ডেকে এনে দেখিয়েছি। তাঁরা নানাভাবে পরীক্ষা করে গরুটিকে সুস্থ ও নিরাপদ বলেছেন।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈশ্বরদীতে পশুর হাট দুইটি। সপ্তাহের ভিন্ন ভিন্ন দিনে হাটগুলো বসছে। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের চিকিৎসক দল এসব হাটে গিয়ে নিয়মিতভাবে উপস্থিত থাকছে।
দলের সদস্যরা জানান, কোনো যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়া শুধু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে হাটের গরু পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছর থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের সহায়তায় গরুর স্টেরয়েড-বিষয়ক পরীক্ষা করা হবে।
চিকিৎসক দলের ভেটেনিনারি সার্জন ডা: তানজিলা ফেরদৌসী বলেন, ‘স্টেরয়েড খাওয়ালে গরুর কোষগুলো অতিরিক্ত পানি ধরে রাখায় সেগুলোকে মোটা ও মাংসল মনে হয়। এ জন্য এসব গরুর শরীরে চাপ দিলে দেবে থাকে। গরুর পেছনের অংশে মাংসের পরিমাণ বেশি মনে হয় ও কিছুটা ঝুলে থাকে। ভালোমতো লক্ষ করলে স্বাভাবিক ও স্টেরয়েড খাওয়ানো গরুকে আরও কয়েকটি লক্ষণের মাধ্যমে পৃথক করা যায়।’
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দলের সদস্য হয়ে আমি হাটে গিয়ে পরীক্ষা করেছি। এখন পর্যন্ত স্টেরয়েড খাওয়ানো গরুর অস্তিত্ব পাইনি। আসলে এবার আমরা কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছি। যেসব ওষুধের দোকানে স্টেরয়েড-জাতীয় উপাদান বিক্রির অভিযোগ ছিল, সেগুলো কড়া নজরদারিতে রেখেছিলাম। ফলে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এবার কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।’
অরণকোলা পশু হাটের ইজারাদার আলহাজ্ব মিজানুর রহমান রুনু মন্ডল বলেন, এবার কৃষক ও খামারিরা ক্ষতিকর স্টেরয়েড খাইয়ে গরু মোটাতাজা করেননি বললেই চলে। এর পরও চিকিৎসক দলের সদস্যরা হাটে উপস্থিত থাকায় ক্রেতারা শতভাগ আস্থা নিয়ে গরু কিনছেন।